বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS), ব্যাংক এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (PSP)–কে একত্রে যুক্ত করছে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (NPSB)–এর মাধ্যমে।
এর ফলে বিকাশ, নগদ, উপায়, রকেটসহ সব প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সরাসরি টাকা পাঠানো সম্ভব হবে। আগে বিকাশ থেকে নগদে বা নগদ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যেত না, কারণ প্রতিটি আলাদা সিস্টেমে চলত। এখন সেই সীমাবদ্ধতা দূর হচ্ছে।
১. NPSB - এক প্ল্যাটফর্মে সব সেবা
আগে বিকাশ, নগদ, রকেট— প্রতিটি নিজস্ব সিস্টেমে চলত। তাই এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে টাকা পাঠানো সম্ভব ছিল না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক NPSB সিস্টেমের মাধ্যমে সব MFS ও ব্যাংককে একত্রে যুক্ত করছে। ফলে এখন থেকে এক অ্যাপ থেকেই অন্য অ্যাপে টাকা পাঠানো যাবে, যেমন ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এ এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা যায়।
২. আলাদা অ্যাপ নয়, সরাসরি নিজের অ্যাপ থেকেই ট্রান্সফার
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক “Binimoy” নামে একটি অ্যাপ চালু করেছিল, যা দিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে টাকা পাঠানো যেত। তবে সেটি খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। এবার আলাদা কোনো অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে না।
নিজের বিকাশ, নগদ, উপায় বা রকেট অ্যাপ থেকেই সরাসরি অন্য প্ল্যাটফর্মে টাকা পাঠানো যাবে। যেমন, নগদ অ্যাপে গিয়ে “Send Money” অপশন থেকে বিকাশ নম্বর লিখে টাকা পাঠালে সেটি সরাসরি বিকাশ অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।
৩. নির্ধারিত চার্জ ও সীমা
বাংলাদেশ ব্যাংক এই লেনদেনের জন্য নির্দিষ্ট চার্জ নির্ধারণ করেছে। MFS থেকে MFS বা ব্যাংকে ট্রান্সফার: ০.৮৫% (ভ্যাটসহ)
- উদাহরণস্বরূপ,
নগদ থেকে বিকাশে ১,০০০ টাকা পাঠালে চার্জ হবে ৮ টাকা ৫০ পয়সা।
যে পাঠাচ্ছে, সেই চার্জ দেবে। গ্রহীতা কোনো চার্জ দেবে না। দৈনিক ও মাসিক ট্রান্সফার সীমা আগের মতোই থাকবে।
৪. রিয়েল-টাইমে ট্রান্সফার — NPSB সিস্টেমের কার্যপ্রণালী
যখন একজন ব্যবহারকারী টাকা পাঠাবে, তখন তার অ্যাপের পেছনে NPSB-এর ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম কাজ করবে।
- প্রেরক প্রাপকের নম্বর ও টাকা নির্ধারণ করবে
- সিস্টেম বুঝে নেবে প্রাপক কোন প্ল্যাটফর্মে আছে
- NPSB-এর মাধ্যমে টাকা মুহূর্তেই প্রাপকের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে
- পুরো প্রক্রিয়াটি হবে রিয়েল-টাইমে, অর্থাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই টাকা স্থানান্তর সম্পন্ন হবে।
১ নভেম্বরের পর থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট ও ব্যাংক একই নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, নিজস্ব অ্যাপ থেকেই অন্য প্ল্যাটফর্মে টাকা পাঠানো যাবে!
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম আরও আধুনিক, দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে। ব্যবহারকারীর জন্য সময় ও ঝামেলা কমবে এবং ব্যবসায়িক লেনদেন হবে আরও নির্ভরযোগ্য। এটি বাংলাদেশের ক্যাশলেস অর্থনীতি গঠনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক প্রেস
0 Comments