মেটাভার্স এ আপনি নিজেই নিজের একটা 3D দুনিয়া তৈরি করতে পারবেন। সেখানে আপনার একটা 'ভার্চুয়াল কপি' বা 'এনিমেটেড কপি' (Avatar) বসবাস করবে। আপনি চাইলেই সেখানে আপনার বন্ধু বা আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। আপনার প্রোফাইল পিকচারের মতোই আপনার '3D Avatar' সেখানে আপনার প্রতিনিধিত্ব করবে। মজার বিষয় হচ্ছে সেখানে আপনি আপনার একাধিক 'ভার্চুয়াল কপি' তৈরি করতে পারবেন। যেমন গেইম খেলার জন্য একটা, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ভ্রমণের জন্য একটা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য একটা। শুধু তাই না, সেই দুনিয়ায় আপনি পছন্দমতো যেকোনো পোশাক পরতে পারবেন, কাপড় ও আসবাবপত্র কিনতে পারবেন, আপনার ভার্চুয়াল ঘর আপনার ইচ্ছেমতো সাজাতে পারবেন। অনেকে সেখানে বিভিন্ন 3D অবজেক্ট তৈরি করে বিক্রি করবে, আর আপনি কিনবেন। অবশ্য আপনিও সে দুনিয়ার বিক্রেতা হতে পারবেন, যদি আপনি 3D অবজেক্ট তৈরি করতে পারেন।
মেটাভার্সে যখন আপনি বাংলাদেশে থেকে জার্মানিতে কোনো ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, আর তখন যদি টিচার এসে আপনার কানটা মলে দেন, তাহলে আপনি সে ব্যথাও অনুভব করবেন! আপনি দুরবর্তী কারো সাথে যোগাযোগ করার জন্য, তাঁর সাথে চ্যাট করা, ছবি দেখা, কথা শুনার পাশাপাশি তাকে (ভার্চুয়াল কপি) ধরতে পারবেন এবং তার সাথে পাশাপাশি বসে কথা বলার ফিল পাবেন। আপনার আই কন্টাক্ট, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, বডি মুভমেন্ট সব হবে বাস্তব জগতের মতো, হুবহু। এজন্য আপনাকে একটা AR Glass পরতে হবে, যা দেখতে আমাদের সাধারণ চশমার মতোই। যেখানে একটা ক্যামেরা লাগানো থাকবে, আর কাজ করবে আপনার চোখ ও হাতের মুভমেন্টকে অনুসরণ করে। আপনার আসেপাশের পরিবেশ ভালো না লাগলে, আপনি হাঁটতে হাঁটতে বা ঘরে বসেই চলে যেতে পারবেন মেটাভার্সে।
মেটাভার্সে ঘরে বসেই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন আমেরিকায়, চড়তে পারবেন আইফেল টাওয়ারের চূড়ায়, কিংবা ধরে দেখবেন মিশরের হাজার বছরের পুরনো পিরামিড। আপনি চাইলে সেখানে বসেই সেই পিরামিড নির্মাণের ইতিহাসও দেখতে পারবেন, স্বচক্ষে। দেখবেন প্রাচীন কাপড় পরা কোনো মিশরীয় দাস টেনে নিচ্ছে এক বিরাট পাথর, মরুভূমির বালুর উপর এই টানার শব্দ, চিহ্ন এবং সেই মিশরীয় দাসের দীর্ঘশ্বাস আপনি শুনতে পারবেন, ধরে দেখতে পারবেন সেই পাথরটিও! মহাকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে, মহাকাশেও একটা ভ্রমণ করে আসতে পারবেন। আপনি চাইলেই মেটাভার্সে একটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারবেন যেখানে বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল, পাহাড়, ঝর্ণা, সব থাকবে। অন্যদেরকে সে দেশে হয়তো আপনি নিমন্ত্রণ দিবেন। সেখানে ভিসা, পাসপোর্ট ও ফি'র ব্যবস্থা রাখতে পারবেন। আবার কাউকে একসেস না দিয়ে, একাই থাকতে পারবেন সে দেশে। সব মিলিয়ে আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন আপনার স্বপ্নের দুনিয়া। বন্ধুর সাথে বসে গল্প করতে চাইলে তাকে নক দিয়ে শুধু বলবেন, 'এই আমার ঘরে আয়, জরুরি আলাপ আছে'। চাইলে আপনি ভার্চুয়াল ঘরে বসে, ভার্চুয়াল বোর্ডে আপনি যে কোন দাবা অথবা টেবিল টেনিস খেলতে পরবেন, ভার্চুয়াল টিভি দেখবেন বা গান শুনবেন। মিটিং, ক্লাস, আড্ডা এবং খাওয়াদাওয়া সব হবে মেটাভার্সে।
মেটাভার্সে আপনি ডাক্তারও দেখাতে পারবেন। আমি আশংকা করছি হয়তো পতিতালয়ও থাকতে পারে। সেখানে হয়তো পতিতা নির্মানকারী অনেক প্রতিষ্ঠানও থাকবে। হয়তো এক্সেস সবার থাকবে না। তাঁরা বলছে শিশুদের জন্য সেখানে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম থাকবে। সবমিলিয়ে ইন্টারনেটে যা হতে যাচ্ছে, তখন আপনি কতক্ষণ অনলাইনে ছিলেন সেটা হিসেব না করে, কতক্ষণ ছিলেন না সেটা হিসাব করবেন।
উপরে যা যা বলা হয়েছে তা আগামী বছরই হয়ে যাচ্ছে না, এজন্য Meta এক দশকের পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা সবাই মিলে ধাপে ধাপে একটা দুনিয়া নির্মান করছে। নির্মাণ করছে সে দুনিয়ার ইতিহাস। আপনাকে এখন থেকেই সে দুনিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, সেই সর্বগ্রাসী দুনিয়ায় আপনি কি করবেন এবং কিভাবে সেটা মোকাবিলা করবেন সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে। ২০২২ সাল খুব দূরে নয়, দরজায় কড়া নাড়ছে, কড়া নাড়ছে এক নতুন দুনিয়া।
সূত্রঃ Internet | লেখাঃ Rubel Kanti Dey
0 Comments